আসন্ন ৩১ জানুয়ারী ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের আজ শেষ দিন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে নমিনেশন জমা করেছেন খাজাঞ্চী ইউনিয়নের প্রবাসী আরশ আলী গণি। উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন থেকে যুবলীগ নেতা ফয়সাল আহমদও আজ নৌকা প্রতীকের নমিনেশন দাখিল করেছেন। .
৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকার টিকেট উঠেছে বিএনপি-হেফাজত পরিবারের এক প্রবাসীর হাতে। তিনি ওই ইউনিয়নের গোমরাগুল গ্রামের বাসিন্দা সৌদিআরব প্রবাসী আরশ আলী গণি। তৃণমুলে হেরেও কিভাবে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেলেন এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে সর্বস্তরেই সমালোচনার ঝড় বইছে।.
জানা গেছে, আরশ আলী গণি বৃহত্তর সিলেট আওয়ামী পরিবার জেদ্দার নামের সংগঠনের সভাপতি। বৃহত্তর সিলেট আওয়ামী পরিবার জেদ্দা সৌদিআরব নামের সংঘঠনের কোন বৈধতা নেই। আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গ বা সহযোগী কোন সংগঠনের সাথে জড়িত নন তিনি । এমন কি তার পরিবারের কেউই আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত নয়। আপন ভাই আনছার মাহমুদ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক। আপন আরেক ছোটভাই আবিদ মাহমুদ গণি খেলাফত মজলিসের সাধারন সম্পাদক। আপন চাচাতো ভাই শওকত আলী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি। পারিবারিকভাবে তারা এলাকায় আওয়ামীলীগ এন্ট্রি হিসাবে পরিচিত। তার বাবা প্রয়াত আব্দুল গণিও ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন।.
গত ২১ ডিসেম্বর নৌকার মনোনয়নের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তৃণমুলের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলের সর্ব্বোচ ১০টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধর। ৭ ভোট পান প্রবাসী আরশ আলী গণি। আর ৩ ভোট পেয়ে ৩য় হন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মুহিবুর রহমান সুইট।.
কিন্তু গত পহেলা জানুয়ারী শনিবার রাতে কেন্দ্র থেকে চুড়ান্ত মনোনয়ন পান প্রবাসী আরশ আলী গণি। আওয়ামীলীগ দলের সাথে যুক্ত না হয়েও বা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যোগদান না করে কিভাবে নৌকার মনোনয়ন পেলেন সেই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।.
এ ব্যাপারে তৃণমুলে বিজয়ী প্রার্থী শংকর চন্দ্র ধর গণমাধ্যম কে বলেন, তৃণমুলে উপজেলা, জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাব আমার পক্ষে গেলেও কালো টাকার কাছে আমি হেরে গেছি। তিনি বলেন, ব্যক্তি যেই হোক এখন নৌকার পক্ষেই কাজ করতে দলকে সংগঠিত করা হচ্ছে।.
অপর প্রার্থী মুহিবুর রহমান সুইট বলেন, খাজাঞ্চি ইউনিয়ন নির্বাচনে বিএনপি-হেফাজতের হাত থেকে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা রক্ষা করা যায়নি। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় আওয়ামী এন্টি পরিবারের হাতে নৌকাকে বিক্রি করে দেয়া হলো। দূর্দিনের কর্মিদের অবমূল্যায়ন করে অনুপ্রবেশকারীর হাতে নৌকা দিয়ে স্বাধীনতার প্রতীককে কলংকিত করা হয়েছে। তিনি জানান, সবকিছু পরে নৌকা প্রতীক যেখানে আমি, আমরা সেখানেই থাকবো।.
তৃণমূলের সিদ্ধান্ত কে প্রাধান্য না দেয়ায় কেন্দ্র ও উপরের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষ্যাপে বসেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফেসবুক সহ গণমাধ্যমে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষনা দিচ্ছেন। .
তবে প্রবাসী আরশ আলী গণির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যম কে বলেছেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত আছি। আমি বৃহত্তর সিলেট আওয়ামী পরিবার জেদ্দার সভাপতি। এছাড়া আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে, কোন শাখার সদস্য তা তিনি বলতে পারেননি। তার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের নেতা বা সমর্থক আছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বুঝতে পারছি না, এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলছি বলে ফোন রেখে দেন।.
এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক আহমদ বলেন, নৌকার মনোনয়ন দিতে তৃণমুলের ভোটের পাশাপাশি স্থানীয় ভোটের মাঠ নিয়ে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট হয়। তারই প্রেক্ষিতে ভোটের মাঠের অবস্থান অনুযায়ী কেন্দ্র প্রার্থী নির্ধারন করে।.
তিনি আরও বলেন, আরশ আলী গনি একজন প্রবাসী, গত ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে তিনি কাজ করেছেন। ইতিমধ্যে এলাকায় তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে তার। প্রার্থী বিবেচনা না করে উন্নয়নের প্রতিক নৌকায় ভোট দিতে তিনি ইউনিয়নবাসীকে আহবান জানান।.
প্রসঙ্গত, ৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ ৩ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৬ জানুয়ারি, মনোনয়পত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ৭ থেকে ৯ জানুয়ারি, আপিল নিস্পত্তি ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্ধ ১৪ জানুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে। . .
ডে-নাইট-নিউজ / সিলেট প্রতিনিধিঃ
আপনার মতামত লিখুন: